
গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। শহরাঞ্চলে শিক্ষার মান ও সুযোগ তুলনামূলক ভালো হলেও, গ্রামাঞ্চলে এখনো মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের পথে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে, তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ শিক্ষার মান উন্নয়ন অপরিহার্য।
গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষার চ্যালেঞ্জ সমূহ
১. অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা:
গ্রামের অনেক স্কুলে নেই প্রয়োজনীয় কক্ষ, পর্যাপ্ত বেঞ্চ, টয়লেট বা নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। অনেক প্রতিষ্ঠান মাটির ঘরে কিংবা অস্থায়ী টিনের ছাউনির নিচে চলে, যা শিক্ষার পরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
২. শিক্ষক সংকট ও অনুপস্থিতি:
গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব একটি সাধারণ সমস্যা। অনেক সময় একজন শিক্ষককে একাধিক শ্রেণি সামলাতে হয়। এছাড়া, অনেক শিক্ষক নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না, যার ফলে শিক্ষার্থীদের শেখার মান নেমে যায়।
৩. প্রযুক্তির অপ্রতুলতা:
বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও গ্রামীণ স্কুলগুলোতে কম্পিউটার, ইন্টারনেট কিংবা ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
৪. দারিদ্র্য ও আর্থিক সমস্যা:
গ্রামীণ পরিবারের অনেকেই দারিদ্র্যের কারণে সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন না। অনেক শিশুকে পরিবারে আয় বৃদ্ধির জন্য ছোটবেলা থেকেই কাজ করতে হয়, যা স্কুলে উপস্থিতি কমায় এবং ঝরে পড়ার হার বাড়ায়।
৫. মানসিকতা ও সচেতনতার ঘাটতি:
অনেক গ্রামীণ পরিবারে এখনো শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা কম। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোকে সময় ও অর্থের অপচয় মনে করা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না।
ইতিবাচক পরিবর্তন ও সম্ভাবনা
তবে শুধু সমস্যা দিয়েই গ্রামীণ শিক্ষার চিত্র আঁকা যায় না। গত কয়েক দশকে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও লক্ষ করা গেছে।
১. সরকারি পদক্ষেপ:
সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, উপবৃত্তি প্রদান এবং স্কুলে খাবার সরবরাহের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার চেষ্টা করছে। এসব পদক্ষেপ ইতোমধ্যে অনেকটা সফলও হয়েছে।
২. এনজিও ও বেসরকারি উদ্যোগ:
ব্র্যাক, জাগো ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন এনজিও গ্রামে মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছে। ব্র্যাক স্কুলগুলো দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
৩. ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম:
সরকার ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’, ‘শিক্ষা টিভি’ এবং অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল উপকরণ সরবরাহের চেষ্টা করছে। যদিও এখনো পরিপূর্ণভাবে পৌঁছাতে পারেনি, তবুও এর সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
৪. নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি:
বর্তমানে গ্রামে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের সংখ্যা এখন অনেক জায়গায় ছেলেদের চেয়েও বেশি। এটি একটি সামাজিক ও মানসিক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।
করণীয়
গ্রামে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে নিচের দিকগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন:
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন: প্রতিটি স্কুলে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ভবন, টয়লেট, পানির ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।
- শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা: প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি গ্রামে কাজ করতে আগ্রহী করার জন্য আর্থিক ও সামাজিক প্রণোদনা দেওয়া উচিত।
- ডিজিটাল শিক্ষা সম্প্রসারণ: গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।
- সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক পরিবর্তন: অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মসজিদের ইমাম বা ইউপি সদস্যদের এই প্রচারে যুক্ত করা যেতে পারে।
- বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ: মেয়েদের শিক্ষায় টিকে থাকার জন্য বাল্যবিবাহ রোধ একটি জরুরি পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা একসঙ্গে দরকার।
বাংলাদেশ আজ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। টেকসই উন্নয়ন অর্জনে মানসম্মত শিক্ষা একটি অপরিহার্য উপাদান, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। চ্যালেঞ্জ অনেক থাকলেও, সদিচ্ছা, পরিকল্পিত উদ্যোগ ও অংশীদারিত্বমূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। একজন শিক্ষিত শিশু কেবল নিজের নয়, গোটা সমাজের ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে। তাই গ্রামীণ শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আজকের মতো বিদায়। আল্লাহ হাফেজ।
বলছি শুনো’র সদস্য হোন। আর প্রচার করুন আপনার উন্মুক্ত মতামত।
উন্মুক্ত মত প্রকাশের ব্লগ। লিখুন আপনার মতাদর্শ, জানুক সাড়া বিশ্ব।
মুক্তমত প্রচারে আপনার ব্লগ। একান্তই নিজস্ব এলোমেলো ভাবনা, দর্শন, মুক্তচিন্তার প্রচারই বলছি শুনোর উদ্দেশ্য। প্রতিদিন চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, মাথায় কিলবিল করা এলোমেলো ভাবনা, আপনার অভিব্যক্তি, আপনার ভালো লাগা, ভালো না লাগা সকল বিষয়ের নিজস্ব অভিমত। লিখতে পারেন আপনার নিজস্ব উক্তি, কবিতা, ইসলামিক নিবন্ধ। মন্তব্য করতে পারেন সকল লেখকদের লিখা নিয়ে।
বিভিন্ন প্রফেশনের এক্সপেরিয়েন্সে লেটার তৈরির সহজ এপ্লিকেশন : Showkatbd Experience Letter