
অন্তহীন সংগ্রামে ফিলিস্তিন
অন্তহীন সংগ্রামে ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিন—একটি নাম, যা আজ সারা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই সংকট যেন একটি দীর্ঘকালীন মানবিক ট্র্যাজেডির নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি আরও জটিল, সহিংস ও করুণ হয়ে উঠেছে। গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত, পশ্চিম তীরে বাড়ছে দখলদারিত্ব এবং প্রতিদিনই মানুষ হারাচ্ছে জীবন, ঘরবাড়ি ও স্বপ্ন।
অন্তহীন সংগ্রামে ফিলিস্তিন ব্লগে আমরা ফিলিস্তিনের বর্তমান বাস্তবতা, ইতিহাসের প্রেক্ষাপট, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য দিকগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব।

ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিন সংকটের মূল উৎপত্তি ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, যখন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়। এই ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের দিনটি এখনও ফিলিস্তিনিদের মনে গভীর ক্ষত হয়ে আছে। এর পর থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থামেনি। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখল, বসতি নির্মাণ, সেনা অভিযান এবং অবরোধ ক্রমাগত উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি (২০২৫)
গাজা: এক মানবিক বিপর্যয়
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষ এখনো থামেনি। গাজার অবস্থা ভয়াবহ; ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে হাজারো স্বপ্ন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষের ৮০% এর বেশি এখন মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। হাসপাতাল, স্কুল, জল সরবরাহ ব্যবস্থা সবকিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত।
বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই—এ যেন এক জ্যান্ত মৃত্যুপুরী। শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, কারণ তারা জন্ম থেকেই যুদ্ধ ও ক্ষুধা দেখছে।
পশ্চিম তীর: বাড়ছে সহিংসতা ও দখল
গাজা-ইসরায়েল সংঘর্ষের ছায়া পশ্চিম তীরেও পড়েছে। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বসতি সম্প্রসারণ, বাড়িঘর ধ্বংস ও গ্রেফতার বেড়েই চলেছে। ফিলিস্তিনি তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সহিংসতাকে আরও উসকে দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক এনজিও এবং কিছু দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও কার্যত তেমন কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। পশ্চিমা শক্তির একাংশ যেমন ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’কে সমর্থন করছে, তেমনি বিশ্বের আরেক অংশ ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নির্যাতন ও গণহত্যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। তবে রাজনৈতিকভাবে এই জনমতের প্রভাব এখনও দৃশ্যমান নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চলছে, কিন্তু বিচারের অপেক্ষা দীর্ঘ।
মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
এই সংকট শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। হাজার হাজার শিশু আজ অনাথ, মা-বাবা সন্তান হারাচ্ছে, শতাব্দীপ্রাচীন সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা যেন এক নির্মম বাস্তবতার সাক্ষী হচ্ছি যেখানে নিরপরাধ মানুষ প্রতিদিন যুদ্ধের বলি হচ্ছে।

সমাধানের সম্ভাব্য পথ
এই সংকটের স্থায়ী সমাধান একমাত্র ন্যায্যতা ও মানবিকতার ভিতরেই নিহিত। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপ এবং ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ছাড়া এই সংঘাতের অবসান অসম্ভব।
ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে শুধু যুদ্ধবিরতি দিয়ে শান্তি টেকসই হবে না।
ফিলিস্তিন আজ বিশ্ব বিবেকের একটি পরীক্ষা। সেখানে যা ঘটছে তা আমাদের মানবতা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও নৈতিক অবস্থানের প্রশ্ন তোলে। আমরা যদি নীরব থাকি, তাহলে শুধু ফিলিস্তিন নয়, সারা পৃথিবীর জন্যই এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
আজ সময় এসেছে, আমাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করার, মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর। ফিলিস্তিনিরা শুধু অস্তিত্বের জন্য লড়ছে—তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
অনেক শুভ কামনা জানাই। আল্লাহ ফিলিস্তিনবাসীকে রক্ষা করুণ! আমিন