আজান প্রচলনের ইতিহাস : মুসলিম উম্মাহ্ প্রতিদিন ৫ বার আজানের ধ্বনি শুনে মসজিদে গমন করেন। এবং সমবেত হয়ে এক আল্লাহ্ তা’লার প্রার্থনা করেন। আজান ইসলামের প্রতীক, প্রতিটি মুসলমানকে দিনে ৫বার একত্রিত করার আহবান, আল্লাহ্ তা’য়ালার কাছে নিজেদের সোপর্দ করার এ’লান। আজানের আওয়াজ শুনার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানরা মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায়ে একত্রিত হয়। জামাআতে নামাজ আদায়ের জন্য আজান দেয়া সুন্নাত। কেউ কেউ একে ওয়াজিবও বলেছেন।
আজান কি : আজান اذان এর অর্থ আহবান, ডাকা, ঘোষনা বা ধ্বনি । পরিভাষায়, শরিয়ত নির্ধারিত দৈনিক ৫ বার প্রার্থনার উদ্দেশ্যে আহবান করাকে আজান বলে।
আজানের প্রচলন কিভাবে এবং কখন : ইসলামের প্রথম দিকে আজান ছাড়াই নামাজ পড়া হতো। প্রিয়নবি মদিনায় হিজরত করে যখন মসজিদ নির্মান করলেন তখন মুসলমানদের নামাজে অংশগ্রহনের জন্য সমবেত করতে সুর্নিদিষ্ট সংকেত দিয়ে আহবান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। এবং সাহাবাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। সাহাবারা নামাজে একত্রিত হবার সংকেত ঠিক করলেন –
১. শিঙ্গা বাজানো,
২. ঝান্ডা উড়ানো,
৩. ঢোল বাজানো,
৪. আগুন প্রজ্জ্বলন।
উল্লেখিত চারটি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যত হলো । কারন :
১. শিঙ্গা বাজানো : এটা খ্রিষ্টানদের কাজ,
২. ঝান্ডা উড়ানো : সব মানুষ বাড়ি বা দূর থেকে দেখতে পাবেনা,
৩. ঢোল বাজানো : এটা ইহুদীদের কাজ,
৪, আগুন প্রজ্জ্বলন : অগ্নি পুজকের কাজ।
সমাধান ছাড়াই শেষ হলো পরামর্শ সভা।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদের স্বপ্ন : ঐ রাতেই হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখেন – “এক ব্যক্তি শিঙ্গা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি শিঙ্গাটি ক্রয় করতে চাইলেন। ক্রয়ের কারন জানতে চাইলে যায়েদ বললেন, আমি শিঙ্গাটি দিয়ে মানুষকে নামাজে আসার জন্য আহ্বান করবো। তখন শিঙ্গার মাালিক বললো – ”আমি কি এটি হতে উত্তম একিট জিনিসের সংবাদ দিব না “ এ বলে তিনি আজানের বাক্যগুলো আব্দুল্লাহ ইবেন যায়েদকে শিখিয়ে দিলেন।
সকালে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ নবীজির দরবারে উপস্থিত হয়ে স্বপ্নের কথাগুলো জানালেন। রাসুলুল্লাহ সা: বললেন, ”তোমার স্বপ্ন সত্য, তুমি বেলালকে আজানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দাও। আজ থেকে বেলাল আজান দিব।”
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদের স্বপ্নে দেখা বাক্যগুলো দিয়ে হজরত বেলাল আজান দিলে, তা শুনে হযরত ওমর রাদি আল্লাহু তা’য়ালা আনহু নবীর দরবারে দৌড়ে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল ! ঐ সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। অবশ্যই আমি অবিকল এ বাক্যগুলোই স্বপ্নে দেখেছি।’
উল্লেখ্য যে, ঐ রাতে একই স্বপ্ন সাহাবিদের মধ্য থেকে ১৪ জনই দেখেন। এভাবেই শুরু হয় আজানের প্রচলন।
আজানের বাক্যসমুহ :
– আল্লাহু আকবার – আল্লাহ মহান,
– আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই,
– আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ – আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল বা পয়গম্বর,
– হাইয়া আ’লাস সালাহ্ – নামাজের জন্য আসো,
– হাইয়া আ’লাল ফালাহ্ – কল্যানের জন্য আসো,
– আল্লাহু আকবার – আল্লাহ মহান,
– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই
ফজরের আজানে বাড়তি বাক্য : ফজরের আজানের বাড়তি বাক্য ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ সম্পর্কে জানা যায় যে, একদিন ফজরের সময় হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু আজান দিতে আসলেন, তখন তাকে বলা হলো, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমে আছেন। তখন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন-‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম। অর্থাৎ ঘুম হতে নামাজ উত্তম।’
হজরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব বলেছেন, ‘পরে ফজরের আজানের সঙ্গে এ বাক্যটি যুক্ত করে দেয়া হয়।’
তবে সুন্নাত বা ওয়াজিব যা-ই হোক না কেন, আজান ইসলামের প্রতীক। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কারও বিপরীতে অভিযান পরিচালনা করতেন; ঐ সময় তাদের মধ্য থেকে যদি আজানের ধ্বনি আসত তবে তিনি তাদের সঙ্গে অভিযান বন্ধ করে দিতেন এবং বলতেন, তারা মুসলিম।’
আজান প্রচলনের ইতিহাস মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের জানা অতিব জরুরী। আশা করি, আর্টিকেলটি সকলের ভালো লাগবে।
শেষ কথা : আল্লাহ তা্আলা আমদের মুসলিম উম্মাহকে আজানের সঙ্গে সঙ্গে দিনে ৫ বার জামাআতে নামাজ আদায়ে মসজিদে একত্রিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আর পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে সুললিত কণ্ঠের অধিকারীদের আজানের জন্য নির্ধারণ করা হোক। যে আহবানে মনের ভেতর বয়ে যাবে প্রশান্তির ঢেউ। আমিন।