চাশতের নামাজ – আদায়ের সময় ও নিয়ম

চাশতের নামাজ : চাশতের নামাজ নফল ইবাদাত বা নফল নামাজ। আর নফল ইবাদত হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাধ্যম। প্রিয় নবী সা. ফরজ সব নামাজের পাশাপাশি এসব নফল নামাজ নিজেও আদায় করতেন এবং অন্যদের আদায়েও উৎসাহিত করেছেন। সাহাবা আজমাইন থেকে শুরু করে তাবে-তাবেইনরা এসব নামাজ আদায় করতেন। চাশতের নামাজকে সালাতুদ দুহাও বলা হয়।

চাশতের নামাজের সময়: সূর্য এক-চতুর্থাংশ উপরে উঠলে, গ্রীষ্মকালে ৯টা-১০টা, আর শীতকালে ১০টা-১১টার সময় সাধারণত তা আদায় করতে হয়। সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম। কেননা, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, صلاة الأوابين حين ترمض الفصال- ‘চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।’

চাশতের নামাজ আদায়ের নিয়ম: চাশতের নামাজের নিয়মও  অন্যান্য নফল নামাজের মতোই।

চাশতের নামাজের নিয়ত: কিবলামুখী হয়ে নফল দুই রাকাত চাশতের নামাজের নিয়ত করেছি আল্লাহু আকবার।

চাশতের নামাজ পড়ার ধারাবাহিক বর্ননা:

১- কিবলামুখী হয়ে নফল দুই রাকাত চাশতের নামাজের নিয়ত করেছি আল্লাহু আকবার (তাকবিরে তাহরিমা) বলে নিয়ত বাঁধা।

২- অতঃপর ছানা পড়া –  سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالِىْ جَدُّكَ وَلَا اِلَهَ غَيْرُكَ (বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআ-লা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গায়রুক)।

৩- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে সূরা ফাতিহা পাঠ করা।

৪- এরপর কোরানের যে কোনো আয়াত বা সুরা মিলানো । সুরা শেষে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে গমন।

৫- রুকুতে সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম পাঠ করা এবং সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলে দাড়ানো এবং

৬- রাব্বানা লাকাল হামদ বলে সিজদায় যাওয়া।

৭- ১ম সিজদায় গিয়ে ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা‘ পড়া। আল্লাহু আকবার বলে প্রথম সিজদাহ থেকে উঠে- আল্লাহম্মাগ ফিরলি ওয়ার হামনি, ওয়ার জুকনি, ওয়াহদিনি পাঠ করা এবং আল্লাহু আকবার বলে

৮- আবার ২য় সিজদায় গমন এবং “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” পড়া।

৯- অত:পর আল্লাহু আকবার বলে পরবর্তী রাকা’আতে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ানো,

১০-  আবার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” বলে সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত।

১১- এবং কুরআনের আরেকটি অংশ বা সূরা পাঠ করা। পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলে

১২- দ্বিতীয় রুকুতে যাওয়া এবং আবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম” পাঠ করা।

১৩- সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলে দাড়ানো এবং ফের

১৪- রাব্বানা লাকাল হামদ পাঠ শেষে সিজদায় যাওয়া।

১৫- ২য় রাকাতের সিজদায় গিয়ে ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা‘ পড়া। আল্লাহু আকবার বলে প্রথম সিজদাহ থেকে উঠে- আল্লাহম্মাগ ফিরলি ওয়ার হামনি, ওয়ার জুকনি, ওয়াহদিনি পাঠ করা এবং আল্লাহু আকবার বলে

১৬- আবার ২য় সিজদায় যাওয়া এবং “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” পড়া। পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলে উঠে বসা।

১৭- অতঃপর বসাবস্থায় তাশাহহুদদরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে আস্সালামু আলাইকুম বলে প্রথমে ডানে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে  পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং মুসলিম উম্মাহকে প্রতিটি দিন সুন্নতের ওপর অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

চাশতের নামাজের রাকাত সংখ্যা:

চাশতের নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত। তবে চার রাকাত পড়াই উত্তম। আরও বেশিও পড়া যায়। উপরে ৪, ৮, ১২ রাকাত পর্যন্ত হাদীসে পাওয়া যায়। কেননা এটি নফল নামাজ। নফল নামাজ বেশি পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং সওয়াব রয়েছে। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের আগে রাসুল (স.) আলী (রা.) এর বোন উম্মে হানি (রা.)-এর ঘরে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাত পড়েছিলেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং সেজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাত অন্তর সালাম ফিরিয়েছিলেন।

হাদিসে এসব নফল নামাজ দুই রাকাত করে পড়ার কথা রয়েছে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, صلاة الليل والنهار مثنى مثنى ‘দিন ও রাতের নফল নামাজ দুই দুই রাকাত করে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *