মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী এর তিনটি কবিতা
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী এর তিনটি কবিতা :
বাংলাদেশের সমকালীন কবিতায় মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী একটি অনন্য স্বর—যিনি জল, হাওর, স্মৃতি, প্রেম ও প্রতিবাদের অন্তর্জালকে রূপ দিয়েছেন এক বহুমাত্রিক কাব্যভাষায়। তাঁর কবিতা নিছক অলঙ্কারিক নয়, বরং এক অস্তিত্ববাদী সুরের ধ্যান; প্রান্তিক মানুষের নিঃশব্দ জবানবন্দির ভাষা। হাওরের ধূসর কাদায় দাঁড়িয়ে তিনি যে কবিতার শরীর নির্মাণ করেন, তা একই সঙ্গে লোকজ ও আধুনিক, ধ্রুপদী ও উত্তরাধুনিক, মরমিয়া এবং রাজনৈতিক। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বলছি শুনোর জন্য কবির তিনটি কবিতার সংকলন উপহার-
রিস্টোর অপশন নেই
আমার জন্মের তারিখ নেই—
সার্ভারে ডিলিট
মায়ের চোখে ফেলে রাখা হালকা কুয়াশা
একটা নাম ছিল
যা ভুল বানানে ছাপা হয়েছিল ফেসবুকের প্রোফাইলে
তারপর আমি ছিলাম—
স্ট্যাটাস, কমেন্ট, ইনবক্সের অপঠিত গন্ধ
স্কুল বলেছে আমি ছাত্র নই
রাষ্ট্র বলেছে আমি নাগরিক নই
প্রেমিকা বলেছে আমি মানুষ নই
তবু আমি লিখে গেছি
একটি আত্মজীবনী
যা কেউ কখনো ‘লাইক’ দেয়নি
স্মৃতির ক্লাউডে জমে আছে
আংশিক ব্যাকআপ
আর এক অদৃশ্য ঈশ্বরের recycle bin-এ
আমার শেষ প্রার্থনা:
তুমি কি আমাকে রিস্টোর করবে?
সম্ভাব্যতা ও শূন্যতার মধ্যে
তুমি বলেছিলে—মানুষ এক সম্ভাবনা
আমি দেখেছি—পোড়া ছাদের নিচে
জন্মে ছাইরঙা গোলাপ
যার গন্ধে আত্মহত্যা করে মৌমাছিরা
শিক্ষার নামে দেয়ালে ঠেকে গেছে শব্দ
তবু বিজ্ঞাপন চায় ‘চিরসবুজ স্বপ্ন’
ভালোবাসা এখন এক API—
ভুল কোডে লোড হয়
একাকিত্বের বিজ্ঞাপন-ফ্ল্যাশ
আর মনুষ্যত্ব?
সে তো পোস্ট-ট্রুথ যুগের বায়োনিক যাযাবর
যে কার্বন-মৃত্যুর শহরে
‘মানুষ’ নামক ফাইলটা খুঁজে পায় না আর…
অন্তর্হরণের নিঃশব্দ গহ্বর
অভাব, নিরব ভাঙন—
ভাত নয়, গাঙের ছেঁড়া তীরে
অক্ষরের অ্যাসিড ফোটে
জীবনের অজস্র গোপন ক্ষত
শিরার মধ্যে জমে থাকে
ঝিনুকের বেলা ঘুমানো নিঃশ্বাস
অব্যক্ত স্পর্শ—
অন্তঃস্থ লুপ্তস্বর
যা অনুবর্তিত হয়ে যায়
পাহাড়ের গুহায় শিহরণ জাগিয়ে
ছিন্ন-ফাঁকা পৃষ্ঠায়
ঘুমায় এক অশ্রুত আত্মজীবনী
যা পড়ে না কেউ, ভালোবাসে না কেউ—
মাটির নিচে ঘুমায় বাঁশির সুর
হাওরের ব্যালকনিতে
ঝুলে থাকে এক জোড়া নোংরা মোজা
কাঠের ঠোঁটহীন কৌণিক মুখে
যেখানে চোখের বদলে
দোলে ধূলিধরা মৌন প্রতিবাদ—
এক নিঃশেষ মানুষের অনুপস্থিতি…।



